স্বর্গ সন্ধানে


গ্রামের সঙ্গে দেখা হবার  সুযোগ বিশেষ হয়নি কোনদিন ই ।  
কালীঘাট ,যেখানে আমার শৈশব আর কৈশোর কেটেছে , সেটা নিতান্তই জমজমাট শহরাঞ্চল। সেখানে  লোকের ভিড়ে গাছ নজরে পরে না। কোলাহলে পাখীর ডাক চাপা পড়ে। 
সোদপুরে এককালে ছিলাম। তখনি মফঃস্বল টির নগরায়ন শুরু। পুকুর একের পর এক ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বাসিন্দারা গর্বভরে বললেন Development আর পরিবেশবিদরা চিন্তিত হলেন। কিন্ত কালের যাত্রার ধ্বনি থামেনি।  এখন সেখানে বহুতল শপিং মল। মুড়ি -সিঙ্গারাকে তাড়িয়ে পিজা এসেছে। ফুলের গাছ দেখতে দূরবীণ লাগে।         

বর্তমানে বাস ফ্ল্যাটে - বড়  রাস্তার দিকে তাকিয়ে। হর্নের আওয়াজ মধ্যরাতেও থাকে। তাই গ্রাম চাক্ষুষ করার বাসনা ছিল মনের গভীরে। 
২০১৫ সালের জানুয়ারী র মাঝামাঝি। শীত কমের দিকে । বন্ধুবর অশোক প্রস্তাব দিলেন হুগলী জেলার এক গ্রামে যাবার। সেটি তার মামাশ্বশুর বাড়ী , তবে বাসিন্দারা কর্মসূত্রে অন্যত্র থাকেন। বাড়ী দেখা শোনা করার লোকজন আছে।
 আমাদের ছয় জনের দল। একটি টয়োটা ইনোভা তে রওনা দিলাম দিল্লী রোড বরাবর । অশোক পথ প্রদর্শক । দু  ঘন্টার পথ ।  চুঁচুড়া  স্টেশনে র রাস্তাকে ডাইনে রেখে আমরা বামপন্থী হতেই চারদিক কেমন যেন পালটে গেল ।হারিয়ে গেল ট্রাকের আওয়াজ, ফেলে রাখা ভাঙ্গা চোরা কারখানার ছাউনি। বাতাসে যেন সবুজের ছোঁয়া। ডান দিকে আবার বাঁক নিতেই আমাদের গ্রাম । গ্রামের নাম সুগন্ধা । বাহ্‌। কাব্যিক নাম। 
সামান্য এগিয়ে সিং দরজা পেরিয়ে ঢুকে পরেছি বিরাট চত্বরে।সামনে সারি দিয়ে আস্তাবল। এখন ঘোড়া র অভাবে কয়েকটি গরু র বাস। 

এ বাড়ির নাম বড় বাড়ি । বয়স অনেক।মুল বাড়িটি দোতালা । লাল মেঝে আর পেটানো ছহাদ।পুরোনো কিছু আসবাব আছে । বাহুল্য নেই। মনে হয়, বসু রায় পরিবার শিক্ষা দীক্ষা আর পুজা অর্চনা য় দিন কাটিয়েছেন, বিলাস ব্যাসনে নয়। 
একটি বাঁধানো পুকুর বাড়ির চৌহদ্দি র বাইরে। সর্ব সাধারণের ব্যবহারে র জন্য। অপর টি চৌহদ্দি র মধ্যে, গাছের ছায়া য় ঢাকা। 













চত্বরে র মধ্য ভাগে প্রতিষ্ঠিত কালা  চাঁদ  মন্দির । কালা  চাঁদ কষ্ঠি পাথরে তৈরী। রাধারাণী  অষ্ট ধাতুতে । দুজনেই সুসজ্জিত। 
এ পরিবারের পূর্বপুরুষ নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রর  রাজ্ কবিরাজ   ছিলেন। এই মূর্তি মহারাজের উপহার । সেই হিসেবে এ বিগ্রহ প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরোনো।  বাড়ি তুলনায় বয়সে ছোট।
মন্দির দালানের সামনের উঠোনে যত্নে তৈরি বাগান। 




সেই বাগানের বেড়া পেরিয়ে ই তো ফুলের জলসায়। এক অপূর্ব গোলাপ বাগিচা। এত ধরণের আর কোথাও দেখেনি। তাদের বৈচিত্র না দেখা বসরা র  কথা মনে পরায়। শুধু সুগন্ধা নয়  অপরূপা ও। কিছু প্রজাতি র নাম জেনেছিলাম কিন্ত এখন মনে নেই । পাঠকেরা চিনতে পারেন আশা করে ছবি দিলাম। 





















সবজী বাগান শূন্য থাকলে ও পুকুর পাড়ে আপন খেয়ালে বেড়ে উঠেছে সীমের লতা।





দুপুরে র খাওয়া সারতেই বেলা পড়ে এলো। এবার এ গ্রামের প্রাচীন নদীর সাথে মোলাকাত করতে গেলাম দু মিনিট হাঁটা পথে । 





নদীর নাম পৌরানিক। কুন্তী । তাঁর মজে যাওয়া চেহারা মন খারাপ করায়। মহাভারতে র রাজমাতা র আপার মহিমা হারিয়েছে। 




সূর্য ডোবার পালা। এবার ফেরার তোড়জোড়।
আমাদের স্বর্গ দর্শন শেষ।


Comments

abhijit said…
লিখেছ তোমারি শৈলি তে। মনোগ্রাহী। কিন্তু গ্রামের ছবি ততটা হৃদয়গ্রাহী হল না। ফুলের বাহার দেখে ভাল লাগল, কিন্তু এ যে শহুরে ফুল। বাগানটা যেন পাটভাঙ্গা শাড়ি, এলোমেলো গ্রাম্য়বধু কে পেলাম কই ? শুধু সিমের লতা গ্রামের রেশ টুকু ধরে রেখেছে। হয়ত এখন সব গ্রামেরই এই চেহারা। ঘোলে দুধের স্বাদ মেটানো।
SATYANESWAN said…
তোমার শেষ কথাটাই সত্যি। যে গ্রাম নিয়ে লেখা যায়, তাদের চেহারা এ রকমই। সব গ্রামেই ম্যাগী খায় ছেলেরা টিফিনে।
তবে সুন্দর বন আঞ্চলের গ্রাম এতই দুঃস্থ যে তাদের নিয়ে লেখার ক্ষমতা বা বুকের পাটা নেই। সেখানে গ্রামের বধূ জঙ্গল থেকে কাঠ কুড়িয়ে মাতলা নদী তে সাঁতরে ফিরতে বেলা পড়ে যায়। তারপর ঘরে উনুন জ্বালায়। তার গৃহস্বামী সাঁজের বেলা বেরোয় দল বেঁধে।সারারাত মাছ মারে। কাক ডাকা ভোরে ফেরে। তাদের দেখেছি। কিন্ত দেখে অপরাধ বোধ হয়।লিখে উঠতে পারিনি।
এটা তুলনায় সম্পন্ন গ্রাম।এছাড়া বাড়ীটি , তার চত্বর আর বাগানেই বেলা পরে গেল।গ্রাম নজরে র বাইরে থেকে গেছে।
Anonymous said…
Thanks for sharing the link! Nice portrayal of Raj Kabiraj Bari embroidered with Radha Rani
8-stone Silhouette, panoramic village sunset photo, seasonal flowers, and your succinct,
mellifluous writing. Good show, indeed! Keep on adding on to the rich blog to explore...

Popular posts from this blog

Raibahadur

Ex-Meconian's PICNIC at PAT'S COTTAGE at Sonarpur, on 3rd January 2016

People's Mandate