সতু ভাইয়ের আবোল 


মুখার্‌জী পাড়া লেন

নামটি বেশ লম্বা হলে কি হবে, রাস্তা দীর্ঘ নয় মোটেই। মেরে কেটে সাত শো মিটার।
চওড়াও মানান সই।নেপাল ভট্টাচার্‌জী স্ট্রীট থেকে ছোট গাড়ি একশো মিটার ঢুকে জামাইয়ের মাঠে

দাঁড়ায়। তারপর হেঁটে গিয়ে ঈশ্বর গাঙ্গুলী স্ট্রীট । 
এটুকুই আমার পাড়া। আমার বাল্যের খেলাঘর আর  বয়ঃসন্ধির উপবন।

বন বলাটা নিতান্তই বাহুল্য। খুশীদের বাড়ির গায়ে লাগানো প্রাচীন আমগাছ ছাড়া রাস্তাতে কোন সবুজ নেই। তবে কিনা কবি সুভাষ বলেছেন ফুল না ফুটলেও বসন্ত। তাই গৌরবে বহুবচন আর কি

পঞ্চাশের দশকে আমি যে পাড়ায় চলাফেরা করেছি তার বুক স্লেট পাথরে্র বড় বড় বর্গাকার টুকরো দিয়ে বাঁধানো। গলির প্রতি কোণে র বাড়ির গায়ে গ্যাসবাতি। আমাদের বাড়ির গায়ে একটা ছিল আর তার পরেই বাঁকের মুখে হাবুদার বাড়ির পাশেই আর একটা। সন্ধ্যা র আগে আগেই একজনের নিত্য আসা যাওয়া। পরনে খাটো ধুতি আর গায়ে ফতুয়া। কাঁধে বাঁশের মই। ক্ষিপ্র গতিতে মই বেয়ে উঠে মান্টেল পালটে দেশলাই দিয়ে আলো জ্বালিয়ে একই গতিতে নেমে আসতেন উনি। পাড়া আবছা সোনালী রঙে রঙিন হয়ে উঠতো।

পাথর বিছানো রাস্তা তে মাঝে মাঝে ছিল হাইড্রান্ট । শেষ রাতে কর তাল বাজিয়ে প্রভাতী গান গেয়ে যেতেন কোনো না-দেখা বাবাজী। ঘুম ভাঙত তবে ভয়ে চোখ বুঁজে থাকতাম আবার ঘুমের আপেক্ষায়। তখনই হাজিরা দিতেন কর্পোরেশনের আর একজন। তার কাঁধে হোস পাইপ। ক্যাম্বিসে তৈরী।   তিনি হাইড্রান্টে হোস লাগাতেন। তারপর একটা চারমুখো স্প্যানার দিয়ে খুলে দিতেন জলের মুখ। শুয়ে শুয়ে শুনতাম “ফট্‌, ফট্‌,”। যেন কালি পটকা ফাটছে । ঘুম চৌপাট। তবে ওঠার হুকুম তো নেই। বাবা উঠে বাথরুমে যেতেন একটু বাদেই। আর আমি? এক ছুট্টে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে। সে সময়ে র কালীঘাটের দোতালা বাড়ি র ছাদ। কাছাকাছি উঁচু বাড়ি নেই। দূরে দূরে বাড়ির ছাদে দুই বাঁশে টানানো এরিয়েল আর কঞ্চিতে তৈরী পায়রা ওড়ানোর ব্যোম।  উত্তর -পশ্চিমে মা কালী বাড়ি র মন্দিরের চূড়া। আর দক্ষিণ-পশ্চিমে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের সমাধি মন্দিরে চালা।
চিলে কোঠা র ছাদে উঠলে নাকি হাওড়া ব্রীজও দেখা যেতো। আমি আবশ্যি উঠিনি।সাধ্যে কুলোয় নি। আমার ডাকাবুকো দাদারা আর ছোট ভাইদের কাছে ন্যাড়া ছাদে পাঁচিল বেয়ে উঠাটা ছিল ছেলেখেলা।তাদের মুখেই শোনা।

আর পূর্ব দিকে সেই কাক ভোরে একটা লম্বা ঝাঁকালো নারকেল গাছ পেরিয়ে, রাম বাবুদের ন্যাড়া ছাদ পেরিয়ে,আনেক দূর থেকে সূর্যি ঠাকুর হাজির হতেন গলা সোনায় আকাশ ভাসিয়ে দিয়ে। কি রূপ তার? সাধে কি আর রবিঠাকুরের নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ হোল সদর স্ট্রীটের বাড়ির বারান্দা থেকে?
আজীবন আন্ধকার শেষ রাতে উঠে উনি প্রথম সূর্যের সঙ্গে দেখা করেছেন।


Comments

Popular posts from this blog

Raibahadur

Ex-Meconian's PICNIC at PAT'S COTTAGE at Sonarpur, on 3rd January 2016

People's Mandate